ক্রিপ্টোকারেন্সি কী? কিভাবে বিনিয়োগ শুরু করতে হয়?
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এক রকমের ডিজিটাল কারেন্সি। এই কারেন্সি কোন সরকার বা রাষ্ট্র উৎপাদন বা জোগান দেয় না। এসব বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের এর মাধ্যমে ইন্টারনেট এ যুক্ত থেকে মাইনিং করতে হয়। আর এই মাইনিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিল সব এলগোরিদম, ব্লক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি সম্পন্ন করেই একেকটি কয়েন বানাতে হয়। ক্রিপ্টো মুদ্রা আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
সাধারন কারেন্সির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই যেমন টাকা, রুপি, ইউরো, ডলার, পাউন্ড ইত্যাদি। এই সব মুদ্রা দেশ ভেদে একেক রকম হয়। এদের উৎপাদন এবং নিয়ন্ত্রন ও সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে। এই মুদ্রার সরবরাহ ইচ্ছেমত বাড়াতে কমাতে পারে। কিন্তু প্রতিটি ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি নির্দিস্ট পরিমান কয়েন এর বেশি জেনারেট করতে পারবে না।
উদাহরন স্বরূপ Onecoin সর্বোচ্চ ২.১ বিলিয়ন কয়েন জেনারেট করতে পারবে। আমাদের সাধারন মুদ্রা টাকা, ডলার এর মান যেমন এক নয় এবং মান স্থির থাকে না তেমনি সব ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মান এক নয় এবং মান স্থির থাকে না। যতটুকু জানা যায় Bitcoin যখন মার্কেটে আসল তখন তার প্রারম্ভিক দর ছিল .১০$ এর মত।
সম্প্রতি বিটকয়েনের অবিশ্বাস্য মূল্য বিস্ফোরণে সবার টনক নড়েছে। কেউ আর একে হেলাফেলা করতে পারছেন না। শিকাগো এক্সচেঞ্জে বিটকয়েনের ফিউচার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ম্যারিল লিঞ্চ, ব্যাংক অব আমেরিকাসহ অনেক নামি প্রতিষ্ঠান বলছে, এটা বুদ্বুদ নয়। এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে অবশ্যই কারণ রয়েছে। কারণ অনেক গভীরও বটে।
যতটা না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে বেশি প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক। ইতিমধ্যেই ব্লক চেইন নতুন সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো মুদ্রার প্রয়োজন কী?
সমাজ ও জীবন যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তেমনি অর্থনৈতিক ইনস্ট্রুমেন্টেরও অগ্রগতি হচ্ছে। মুদ্রা নামের জিনিসটার অনেক বিবর্তন ঘটেছে। স্বর্ণ, রৌপ্য বা ধাতব মুদ্রা থেকে সেটা কাগুজে মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। এর নকল ঠেকাতে উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তারপর এল ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড। তা দিয়ে অর্থনৈতিক বিনিময় আরও সহজ হয়ে গেল। এগুলোকে ‘ডিজিটাল কারেন্সি’ বলা যেতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে অভাবনীয় অগ্রগতি এনেছে ক্রিপ্টো মুদ্রা। এর কয়েকটি চরিত্র তুলে ধরা যাক।
- এর কোনো সরকার বা প্রতিষ্ঠান নেই। পৃথিবীজুড়ে বিপুল জনগোষ্ঠী একধরনের নিরাপদ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই মুদ্রার প্রচলন করছে। কেউ নীতিনির্ধারক নয়, সবাই সমান, নেটওয়ার্কের একটি নোড মাত্র। ক্রেতা থেকে বিক্রেতার কাছে সরাসরি, কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই, নিরাপদ ও নিশ্চিতভাবে এই মুদ্রা চলে যাবে। এই মুদ্রাব্যবস্থার কোনো কেন্দ্রীয় রূপ নেই, এখানে সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। এটাকে সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার (পিয়ার-টু-পিয়ার) নেটওয়ার্ক বলে।
- বিটকয়েনের ফলে এক মুহূর্তে যে কেউ ঘানা থেকে চীনে মুদ্রা পাঠিয়ে কোনো কিছু কিনতে পারবে। কোনো ব্যাংকের ব্যাপার নেই, কোনো মুদ্রা বিনিময় হারের ব্যাপার নেই। মধ্যবর্তী কোনো সংস্থা নেই, সেটাই এই মুদ্রার ডিজাইন।
- এই মুদ্রা ত্বরিত এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যেতে পারে। বিটকয়েনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট লাগছে। কিন্তু অন্য কিছু ক্রিপ্টো মুদ্রা আরও কম সময়ে হাত বদল হতে পারে। অথচ বর্তমান মুদ্রা স্থানান্তর ব্যবস্থায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে কয়েক দিন লেগে যায়।